নিউজ ডেস্ক: ‘বাসের ড্রাইভারি করি প্রায় ২২ বছর ধরে। কখনো এমন পরিস্থিতির শিকার হইনি। অনেক হরতাল, অবরোধ দেখেছি। এমন করে সারা দেশে পরিবহন বন্ধ থাকতে দেখিনি। আর আমাদের এমন দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যেও পড়তে হয়নি কখনো। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’
করোনার কারণে আয় রোজগার না থাকায় অনেকের মতো কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে রাজধানীর একটি বেসরকারি গণপরিবহন চালক মোহাম্মদ মফিজ হোসেনের। তার মতো এমন কষ্টে দিন পার করছেন এ খাতের লাখ লাখ শ্রমিক।
চালক মফিজ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গাড়ি চালাই। অনেক অবরোধ, হরতাল দেখেছি। তখনো দেশে এমন অচলাবস্থা দেখিনি। আমার মতো বহু লোক বাসায় বেকার হয়ে বসে আছে।’
কষ্টের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। কাজে যেতে পারছি না, তাই পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। গাড়ির মালিক প্রথমে কয়দিন কিছু টাকা দিয়েছিলো চলার জন্য। কিন্তু তা খুব সামান্য। সেই টাকা দিয়ে ক’দিন চলেছি। কিন্তু এখন কী করবো।’
এনা পরিবহনের কর্মী শাহাদাত হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পরিবহন বন্ধ আছে গতমাসের ২৬ তারিখ থেকে। সেইদিন থেকেই বাসায় বসে আছি। কোনো কাজ নেই। মালিকপক্ষ কিছু টাকা দিয়েছে চলার জন্য। শুনেছি আবারো দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবহন কোম্পানির মালিক আছেন যারা তাদের কর্মীদের কোনো সহযোগিতা করে না। সেইদিক থেকে আমাদের মালিক আমাদের দুইবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তবে যে টাকা দিচ্ছেন তা দিয়ে আসলে সংসার ভালোভাবে চলছে না। খুব কষ্টের মধ্যেই আছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন খুব তাড়াতাড়ি এই দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করেন। ’
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গণপরিবহন সাকুরা প্রাইভেট লিমিটেড। কথা হয় পরিবহনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাইনুল ইসলামের সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পরিবহনের বাস বন্ধ থাকায় কর্মীদের কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। এছাড়া আমাদের গতমাসের বেতনও দিয়েছেন। তার পরও এই মাসের বেতন পাবো কিনা সেই সংশয়ে আছি। কারণ পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
মতিঝিল-ফার্মগেট-উত্তরা রুটের একটি কোম্পানির বাসের সুপারভাইজার আতিক হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ চালক, সুপারভাইজার ও হেল্পাররা গ্রামে গেছেন। আবার অনেকে যেতে পারেননি এই ভেবে যে পরিবহন যদি চলাচল করে তাহলে তাদের কাজে যোগ দিতে হবে। কিন্তু ঢাকায় থেকে অনেকেই এখন খুব বিপদের মধ্যে আছি। সব কিছু বন্ধ থাকার কারণে থাকা, খাওয়াসহ সব কিছুতেই কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনার কারণে দেশে এখন অচল অবস্থা রয়েছে। পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে একদিকে কষ্টে দিনযাপন করছে পরিবহন শ্রমিকরা। অন্যদিকে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবহন মালিকরা। অনেক পরিবহন মালিক রয়েছেন যারা ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নিয়ে রাস্তায় গাড়ি নামিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাদের ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু রাস্তায় বাস না চললে টাকা আসবে কীভাবে। আবার শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেবাখাতে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলেছেন। তাই এই প্রণোদনা যদি তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় তাহলে মালিক ও শ্রমিক দুইপক্ষই বাঁচবে বলে আমি মনে করি। আর এই প্রণোদনার টাকা পেলে কিছুটা হলেও দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।